বেকসুর খালাস পেলেন বাংলাদেশের জামায়াত নেতা আজহার

বেকসুর খালাস পেলেন বাংলাদেশের জামায়াত নেতা আজহার জামায়াতে ইসলামীর নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম।

NYM Desk

Published : 13:44, 27 May 2025

বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের দেওয়া কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে দেশটির সর্ব্বোচ আদালত এ রায় দিয়েছেন।

মঙ্গলবার দেশটির প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। 

বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে এই প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি আপিল বিভাগের রায়ে খালাস পেলেন। 

এ রায়ের ফলে জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলামের মুক্তিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা।

রায়ের পর আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘এ রায়ের জন্য প্রথমে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি। তাকে সব অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।এ রায়ের ফলে সত্য বিজয়ী হয়েছে, মিথ্যা পরাজিত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় ছিল বিচারের নামে অবিচার।এটিএম আজহারের ওপর এটি ছিল নজিরবিহীন নির্যাতনের সামিল।পৃথিবীর ইতিহাসে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা হয়ে থাকবে।’

আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘আজকে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ টি এম আজহারুল ইসলামকে সব অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস দিয়েছে।এখন থেকে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম একজন নির্দোষ ব্যক্তি।এ রায়ের মাধ্যমে আমরা মনে করি সত্য জয়ী হয়েছে, মিথ্যা পরাজিত হয়েছে।’

একই মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের বিষয়ে তিনি বলেন, ইতোপূর্বে জামায়াতের এবং বিএনপির ৬ জন শীর্ষস্থানীয় নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্ততপক্ষে পাঁচজন জেলে মৃত্যুবরণ করেছেন। দুনিয়ার ইতিহাসে এটা নজিরবিহীন নির্যাতনের সামিল।

এটিএম আজহারুল ইসলাম সৌভাগ্যবান উল্লেখ করে এ আইনজীবী বলেন, তিনি ন্যায়বিচার পেয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা তাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন বলে। আমরা এটাও মনে করি, এ রায়ের মাধ্যমে সিন্ডিকেটেড ইনজাস্টিজের অবসান হয়েছে। আমরা এটাও মনে করি, এ রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের আদালতের মর্যাদা সমুন্নত হয়েছে। 

শিশির মনির বলেন, আজকের রায়ে আদালত চারটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। প্রথমটি হলো- বাংলাদেশেসহ ভারতীয় উপমহাদেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা বদলে দেওয়া হয়েছিল- এটা ছিল সবচেয়ে বড় ভুল। 

দ্বিতীয়টি হলো- আদালতের সামনে উপস্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণ কোনো অ্যাসেসম্যান্ট ছাড়াই এ টি এম আজহারুল ইসলামকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে এটি ছিল বিচারের নামে অবিচার। 

যে সমস্ত তথ্য প্রমাণ আদালতের সামনে হাজির করা হয়েছিল, অতীতের আপিল বিভাগ এটা সঠিকভাবে বিবেচনা করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলশ্রুতিতে আজকে এ টি এম আজহারুল ইসলামকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা হয়ে থাকবে। এর মাধ্যমে আমরা মনে করি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সত্য বিজয়ী হয়েছে, মিথ্যা পরাভূত হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী আরও বলেন, আজকে আমরা আদালতের কাছে একটা সংক্ষিপ্ত আদেশ চেয়েছি। আদালত আমাদের আবেদন মঞ্জুর করেছেন। আদালত বলেছেন, আমরা চেষ্টা করব। আজকে এবং কালকের মধ্যেই এই সংক্ষিপ্ত আদেশ প্রস্তুত হয়ে এ টি এম আজহারুল ইসলাম যেন মুক্তি পেতে পারেন সেই জন্য সব রকমের আইনি ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করব।

এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শিশির মনির বলেন, আমরা মনে করি পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার পর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অতীতের অনেক রায় সম্পর্কে এই রায়ে অনেক পর্যবেক্ষণ থাকবে। আমরা মনে করি সরকারের উচিত হবে এই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার পরে একটা রিভিউ বোর্ড গঠন করে অতীতের রায়গুলোকে পুনর্বিবেচনা করা, যেন মৃত্যু পরবর্তী হলেও যাদের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে, অবিচার করা হয়েছে, তাদের পরিবার, তাদের দল এবং এদেশের মানুষ যেন ন্যায়বিচার পেতে পারে। 

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন- এমন অভিযোগে করা মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন বিচারকরা। ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আপিল করেন আজহারুল ইসলাম। শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।

২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এরপর তা পুনর্বিবেচনা চেয়ে ওই বছরের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগে আবেদন করেন আজহারুল ইসলাম। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ রিভিউ শুনে ফের আপিল শুনানির সিদ্ধান্ত দেয়। এটাই প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা, যেটি রিভিউ পর্যায়ে আসার পর ফের আপিল শুনানির অনুমতি পায়।

এর আগে, ২০১২ সালের ২২ আগস্ট মগবাজারের বাসা থেকে আজহারুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। তখন থেকেই অর্থাৎ দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে তিনি কারাগারে বন্দি আছেন।তবে এখন তার মুক্তিতে বাঁধা নেই।

Share: